top of page

 PUBLICATIONS

BY HIS HIGHNESS /  ABOUT HIS HIGHNESS

Publications: Projects
17212068_1442773559097211_8911134662459059482_o.jpg

ড. মূসা জনশক্তি রপ্তানির জনক, শ্রেষ্ঠ রূপকার ও প্রবাদ পুরুষ

APRIL 12 2017

ড. মূসা জনশক্তি রপ্তানির জনক, শ্রেষ্ঠ রূপকার ও প্রবাদ পুরুষ

যিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভাগ্য প্রবর্তক ও কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণকারী বিস্ময়কর এক স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল পথ-প্রদর্শক যার ঋনের বোঝা বইতে হবে এই জাতিকে অনন্তকাল।

মুহম্মদ সিরাজউদ্দিন- 
রেমিট্যান্স- প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ ও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ। প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের উপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। আর যার অবিস্মরনীয় মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও একক ভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের জন্য এই শ্রমবাজার সৃষ্টি করেছেন, যার হাত ধরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ শুরু হয়, যার দীর্ঘমেয়াদী অভূতপূর্ব বলিষ্ঠ উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দেশে আজ বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড পরিমান রিজার্ভ, তিনি আর কেউ নন- বিশ্ব বরেণ্য ধনকূবের ড. মূসা বিন শমশের। রাজকীয় জৌলুসপূর্ণ জীবনধারার জন্য যিনি পৃথিবীজুড়ে প্রিন্স মূসা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের নন্দিত ও আলোকিত গুণীজনদের প্রত্যাশিত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে সম্প্রতি দেশের বনেদী সাপ্তাহিকী দ্যা হলিডে এক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। কারণ ইহা স্বীকৃত সত্য আধুনিক এই সভ্যতার যুগেও আমরা অর্থাৎ সাধারণ জনগণ বুঝতে চাইনা, খোঁজও রাখি না বা বুঝতে চেষ্টাও করি না যে, একটা দুর্দশাগ্রস্থ সম্প্রদায়, দেশ ও জাতি সমস্ত প্রতিকূল অবস্থাকে পরাজিত করে কিভাবে মাত্র গুটি কয়েক অবিশ্বাস্য এবং অভূতপূর্ব মেধাবী বীরোচিত মানুষের ত্যাগ ও তিতিক্ষার অবদানে বীরদর্পে এগিয়ে যায় আর অর্জিত হয় অমূল্য সম্পদের ভান্ডার। অথচ নীরবে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে স্বার্থপরের মত সেই অমূল্য সম্পদের ভান্ডার ভোগ করে গোটা জাতি অনন্তকাল। আর এই স্বার্থপরতাই একটি সংক্রামক ব্যাধি যা আমাদের জাতীয় জীবনে কলঙ্ক। সম্ভবত আমাদের দীর্ঘদিনের এই কলঙ্ক মোচনের জন্যই দেশের ঐ বনেদী সাপ্তাহিটির এই ঐতিহাসিক আয়োজন। তাই পত্রিকাটি যথার্থই বলেছে। কারণ এসব বিরল ও গুনীজনের ব্যক্তি বিশেষের প্রয়াণে জাতি দ্ব্যর্থহীনভাবে শোক প্রকাশ করেনি। এহেন বরেণ্য অনেকেই জীবদ্দশায় জাতীয় স্বীকৃতির আশায় আজও অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন। সূচনাপর্বে লেখকের কিছু ব্যক্তিগত উক্তি রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও রাষ্ট্র-নায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়ার মর্মান্তিক জীবন-অবসানে জাতির ঐক্যবদ্ধ শোক প্রকাশের ব্যর্থতায় এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রাসংঙ্গিকভাবে তিনি কালের বিবর্তনে বিশ্ব বরেণ্য বিরল বঙ্গ-সন্তান প্রিন্স মূসা বিন শমশেরকে অতি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। পৃথিবী ছড়ানো কালজয়ী এ বাংলাদেশী মহৎ গুনীজনের অসংখ্য অনুরক্ত ভক্তের সপ্রশংস দৃষ্টি তাতে নিশ্চিতভাবেই আকৃষ্ট হয়েছে।

ইতিহাস স্বাক্ষ্য, ড. মূসা বিন শমশের বাংলাদেশ স্বাধীনতা-যুদ্ধের বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণনাশে ধ্বসেপড়া জাতীয় অর্থনীতি সর্বজন বিদিতভাবে পুনরুদ্ধারে বিস্ময়কর এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন যাহা কমবেশী সকলেরই জানা। স্বাধীনতা ইতিহাসে সে এক বিরল অধ্যায়। সে দিনের মাতৃমন্ত্রে দিক্ষিত, এক দূরদর্শী ও অমিত সাহসী তরুণ আর্ন্তজাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী যদি স্বীয় দীর্ঘ দিন-লালিত স্বদেশের জনশক্তি বৈদেশীকরণে এক বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী না হতেন, হয়তো আজও বিশ্ব অবাক করা প্রাণবন্ত বাংলাদেশ যুযুসম আরেক সোমালিয়ার ভাগ্য বরণ করতো।

স্বভাবত স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর বছরগুলো কঠিন সব সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সাধারণ মানুষ তখনও পাকিস্তানী নব্য উপনিবেশকতার ক্ষত গায়ে বহন করে ফিরছিল। কালের এ সন্ধিক্ষনে দূর এক মফস্বল শহর হতে আগত দারুণ এক সূদর্শন ধীমান, বাগপটু ও নব্য শিল্প-উদ্যোগী আরব-উপসাগরীয় সালতানাত, কাতারের রাজধানী দোহায় দেশটির রাজপরিবার নিয়ে যৌথ উদ্যোগে এক বিশাল শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের চাকুরীতে ৩ হাজার বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমিক নেয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেন। কিন্তু হরিষে বিষাদসম, কাতার-বাংলাদেশ কূটনৈতিক স্মারক সংঘের অভাবে এ আরব রাজ্যের শ্রমিক সংগ্রহের তালিকায় ঢাকা ছিল না। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানী সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এক অজানা দূঃস্বপ্নসম ছিল। তড়িৎ, এক বিদ্যুৎমন্ন ও কর্ম চঞ্চল মূসা বিন শমশের ঢাকায় পাড়ি জমান। কিন্তু স্বদেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অনীহা লক্ষ্য করে তিনি স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হয়ে পরেন। অন্যদিকে, সদ্য-স্বাধীনতা প্রাপ্ত নাঙ্গা-ভুখাপ্রায় গণ মানুষের সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট লাঘবে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি সরকারকে সাহায্য করতে তীব্র তাগিদ বোধ করেন। ফলে, বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে তিনি জাতির পিতা এবং তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে ৬০এর দশকে তৎকালীন জাতীয় শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবের নিজ জেলা ফরিদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণ মূসা ছিলেন তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ-জন। দেশের প্রতি প্রবল মমত্ববোধ, তৎকালীন প্রতিটি ছাত্র-আন্দোলনে অন্যতম ত্যাগী এবং বলিষ্ঠ ছাত্র-নেতা আজও বঙ্গ-বন্ধুর অমর স্মৃতি বহন করে চলছেন।

সর্বাস্থায় আপোষহীন সেই বঙ্গ-বন্ধুর প্রীতিধন্য ও বর্ণাঢ্য ছাত্রনেতাই আজকের বিশ্ব বরেণ্য বিরল বঙ্গ সন্তান ড. মূসা বিন শমশের। বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সাথে পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাৎকারের সময় ড. মূসা ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ফিলিপাইনে অনুসৃত জনশক্তি রপ্তানির সমন্বিত এক নীতিমালা হাজির করেন এবং তারই আলোকে নিজস্ব পরিকল্পনাটি জোরালো ভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হন। প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে আশ্বস্থ হলেন এবং এতে ১০০% সফলতার নিশ্চয়তা উপলব্ধি করেই পরক্ষনে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব রফিকউল্লাহ চৌধুরীর সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। বঙ্গ বন্ধু আরো বলেন, আমাদের রপ্তানির তো কিছুই নেই, পাট ছিল তাও শেষ। নিজস্ব আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, আমি নিশ্চিত জনশক্তি রপ্তানি হতে পারে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ দূর্যোগ অবসানের রক্ষা কবচ আমাদের কাংক্ষিত নতুন সোনার বাংলা গড়ার এক মক্ষম পথ। এমনি করে সেই দিনের এক তরুণ ড. মূসা, প্রেসিডেন্ট বঙ্গ বন্ধুর সদয়-সমর্থনে ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় জনশক্তি রপ্তানির পথ তৈরি করে স্বদেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রয়াত রফিকউল্লাহ চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর যোগ্য পিতা। নিজ পক্ষ থেকে রফিকউল্লাহ চৌধুরী সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয়ের সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে ড. মূসার পরিচয় করিয়ে দেন এবং গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ইনি স্বয়ং আমাদের প্রেসিডেন্টের আস্থা ভাজন। কালচক্রে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ড. মূসার বহুল সম্ভাবনাময় মহা পরিকল্পনা আটকে পড়ে।

১৯৭৬ সনে আবার নতুন করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে ড. মূসার মহা পরিকল্পনাটি। তৎকালীন শ্রম সচিব এ.এম. মেজবাহ্উদ্দিন অতি গুরুত্বের সাথে ড.মূসা এবং নিজ দফতরের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সপ্তাহব্যাপী বেশ কয়েকটি ফলপ্রসূ বৈঠকের ফলেই নতুন আরেক দিগন্তের সূচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সচিব তাঁর পূর্ণ প্রশাসনিক দলবল নিয়ে ড. মূসার পরিকল্পনা ভিত্তিক দেশের জনশক্তি নীতি মালা প্রনয়ণ করে ফেলেন এবং শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের জনশক্তিরপ্তানির সকল প্রক্রিয়া। পরিণতিতে, দেশের জনশক্তি রপ্তানির দৃশ্যপট দারুনভাবে পাল্টে যায়। মূলতঃ ড. মূসার সৌজন্যে অসংখ্য বাংলাদেশী শ্রমিকের তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের তরল-স্বর্ণ দুয়ার খুলে যায়। বাড়তি লাভ হিসাবে, প্রবাসীদের সৌজন্যে সর্ব প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার এক প্রশস্ত পথ নিশ্চিত ভাবে তৈরি হয়ে যায়। শুভ পরিণতিতে, চলমান জাতীয় ধ্বসেপড়া অর্থনীতির এক বিরাট উর্ধ্বগতি ঘটে।

১৯৭৮ সনে ড. মূসা বাণিজ্য নিয়ে সৌদি আরবে থাকাকালীন, নিজ উদ্যোগে ও বিপুল অর্থ ব্যয়ে জেদ্দায় এক জাঁকালো ও অভূতপূর্ব বাণিজ্যিক অধিবেশনের আয়োজন করেন। অভ্যাগত সম্মানীত স্থানীয় ও বিদেশী অতিথিদের মধ্যে সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মহামান্য প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজও উপস্থিত ছিলেন। প্রিন্স সুলতান প্রধান অতিথির ভাষণে ড. মূসাকে তাঁর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে তাঁর ভূয়শী প্রসংশা করেন এবং সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশকে প্রাধিক্যপ্রাপ্ত দেশ হিসাবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্ববান জানান। সৌদি প্রিন্সের আহ্ববান কালক্রমে শুধু পবিত্র ভূমিতেই নয়, এর বাইরেও আরব দেশ ও রাজ্যগুলোতে প্রতিধ্বনিত হয়ে পড়ে। স্বাগতিক সম্বোধনে ড. মূসা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাদি ব্যক্ত করে এক মন্তব্যে বলেন, বিশ্বের সর্বনিম্ন শ্রম মজুরীর বাজার শুধু তাঁরই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাঁর আবেগময় ভাষণে উপস্থিত সৌদি ও প্রবাসী অতিথিবৃন্দ দারুণভাবে আন্দোলিত হয়ে পড়েন। এমনি করে প্রিন্স সুলতানের শুভেচ্ছায় ও সহযোগিতায় ড. মূসার সৌজন্যে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সর্বত্র প্রসারিত হয়। তখন থেকেই সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে পড়ে।

ড. মূসা সমসাময়িক কালে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায় নানা রাষ্ট্রে শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তা’সত্বেও বাংলাদেশী শ্রমশক্তি রপ্তানির প্রসারে সম্ভাব্য সব উচ্চ মহলে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাতে সফলকাম হন। এমনি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারই নিরলস প্রচেষ্টা ও বিপুল অর্থ ব্যয়ে অচিরেই বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানির এক উজ্জল রেশমী পথ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে, তার মাতৃভূমির জন্য অত্যাবশকীয় বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে যায়। তাঁর সৃষ্ট এমনি জনশক্তির ইতিহাসের ধারা শত বাঁধায়ও থেমে যায়নি।

তার শ্রমশক্তি বাণিজ্য অভিযানে দ্বিতীয় পর্বে, ড. মূসা উত্তর আফ্রিকার দেশসমুহ, বিশেষ করে তেল সমৃদ্ধ লিবিয়ায় তাঁর তৎপরতা প্রসার করেন। সরকার অনুমোদিত তার নিজ হাতে গড়া রিক্রটিং এজেন্সি ড্যাটকো কোম্পানীর মাধ্যমে বিমানভর্তি বাংলাদেশী শ্রমিক লিবিয়ায় প্রায় নিয়মিত পাড়ি জমায়। এক সময়ের হতাশাগ্রস্থ লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিক হয়ে সেখানে তাদের ভাগ্য শশী খুঁজে পায়। এভাবেই তিনি তাঁর মাতৃভূমির রাজকোষে বিস্ময়কর এক অবদান অব্যাহত রাখলে দেশের সরকার তাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।

প্রশান্তির এ পর্বেও ড. মূসা স্বস্থিতে কিংবা বিরামে ছিলেন না। এবার তিনি তাঁর বাণিজ্যিক তরী পূর্বমুখি করলেন। ৯০ দশকের সূচনায় দক্ষিন কোরিয়া প্রাচ্যে এক দারুণ উত্থানপ্রাপ্ত দেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়। তখন তিনি সিউলের বৃহৎ সব শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা, বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত DONG-AH আর্ন্তজাতিক নির্মাণ কোম্পানীর সাথে নিজ দেশের জনশক্তি সরবরাহের সুদৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। যৌক্তিকভাবেই তিনি এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনাময় নতুন এক জনশক্তির বাজার সৃষ্টির অবিসংবাদিত একক দাবীদার।

হয়তো, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে আমাদের প্রবাসী শ্রমিক সম্প্রদায় যথেষ্টভাবে জ্ঞাত। তারা নিশ্চয়ই দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে ড. মূসার গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকার বিষয়ে আদৌ পরিচিত নয়। সদা উদ্যোগী ও কর্মচঞ্চল এ ধনকূবের নিজের আর্ন্তজাতিক ভাবমূর্তির সুবাদে বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রাচ্যের সে দিনের ‘নব্য ধাবমান এশিয় ব্যাঘ্র’ দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে মাতৃভূমির জনশক্তির অর্থবহ সংযোগ সাধন করেন। নিজের নিরলস তৎপরতায় ও বাণিজ্যিক কুটকৌশলে ড. মূসা সিউল কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ে অভাবিত প্রভাব খাটাতে সফল হন। সত্য যে, সেই সময়ে ঢাকা-সিউল কূটনৈতিক আচরণ বিধি চুক্তি বলবৎ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি সে দেশের বৈদেশিক শ্রমিক সংগ্রহের তালিকায় বাংলাদেশ অর্ন্তভূক্ত করতে সমর্থ হন। সুখের বিষয়, নিজে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী থাকার সুবাদে বন্ধুত্ববশে সিউলের তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁকে এ ব্যাপারে দারুণ সহযোগিতা করেছিলেন। বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের প্রবক্তা এ অতি ক্ষমতাধর মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রিন্স মূসার বিশ্বময় সৃষ্ট রাজকীয় আচরণে এ গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে বাংলাদেশের পাশে দাড়িয়ে এক বিরল কূটনৈতিক শিষ্টাচার সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের জনশক্তি রপ্তানির ইতিবৃত্তে তাঁর বিরল অবদান চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

যখন নবীণ বাংলাদেশ সবেমাত্র একুশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে, ঠিক সে মূহুর্তে ড. মূসা তাঁর সদা প্রস্তুত বাণিজ্যতরী উত্তরমুখো করে ইউরোপের দিকে অগ্রসর হন। অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রচুর অর্থ ব্যয়ে মূলতঃ মানবতায় নিবেদিত, ড. মূসা, শেষ পর্যন্ত ইউরোপের স্বপ্নময় স্বর্ণ দুয়ার বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য খুলতে সক্ষম হন। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় সেনজেন রাষ্ট্রসমূহ, বিশেষ করে ইটালির সাথে কূটনৈতিক স্মারকপত্র চুক্তির অভাবে তিনি রোমের ক্ষমতাধর সাংসদদের উপর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাতে সক্ষম হন। তিনি সে দেশের জনশক্তি সরবরাহের তালিকায় বাংলাদেশকে অষ্টম দেশ হিসাবে অর্ন্তভূক্ত করে ফেলেন। অধিকন্তু, তিনি রোম সরকারের সাথে বাণিজ্য কূটনীতি চালিয়ে বাংলাদেশ নার্স কাউন্সিলের সনদ সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি আদায় করেন। পরিণতিতে, এ বিষয়ে দেশের জন্য এক অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে ইতালিতে স্বদেশে অবহেলিত হাজার হাজার বাংলাদেশী নার্স মোটা বেতনে চাকুরী নিয়ে সে দেশে পাড়ি জমায়। জাতীয় আর্থিক উন্নয়নে তাদের অবদান আদৌ নগণ্য নয়। সুখের বিষয়, ইতালি সেনজেন অঞ্চল ভূক্ত থাকায়, বিগত এক দশকে রোমের ভিসা নিয়ে প্রচুর বাংলাদেশী প্রবাসী ইউরোপের সব ধনী দেশে নিজেদের ভাগ্য ফিরাতে সক্ষম হয়েছে। এমনি করে প্রিন্স মূসার সৌজন্যে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার এক নতুন ধারা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছে। সংগত কারণেই প্রিন্স মূসার সৌজন্যে মাতৃভূমির বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য সৃষ্টি হয়।

পরম গৌরবের বিষয়, ৮০’র দশকের শুরুতেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দীর্ঘ সমীক্ষা চালিয়ে ড. মূসা বিন শমশেরকে এশিয়ায় নয়, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ধনকুবের ঘোষনা দেয় ও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ধনী হিসাবে অভিনন্দন জানায়। একই সঙ্গে তাঁকে বিশ্বের সর্বোত্তম জাঁকজমক ও রাজকীয় পোশাকধারী (বেষ্ট ড্রেস্ড ম্যান) বলে স্বীকৃতি দেয়। অবশ্য, তিনি জন্মসূত্রে কোন রাজপুত্র নন, কিন্তু নিজ অনুপম রাজনোচিত আচার আচরণ এবং জীবন ধারা গুণে বিশ্ব নন্দিত রাজপুত্র। স্বীকৃতিতে পশ্চিম বিশ্বের সব মহামান্য রাজ দরবার আনুষ্ঠানিকভাবে ড. মূসাকে বাংলাদেশের মাহামান্য রাজপুত্র খেতাবে ভূষিত করেন। গত ৩৫ বছর ধরে দেশে ও বর্হিবিশ্বে তার পরিবার দেশের একমাত্র ফাইভ স্টার ফ্যামিলি হিসাবে স্বীকৃত ও সম্মানীত। ড. মূসা বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীর বিরল সম্মান অর্জন করে মাতৃভূমির শিরোস্থানে এক উজ্জ্বল মূল্যবান পালক সংযোজন করেছেন। তাইতো দেশের সিংহভাগ মানুষের বিশ্বাস যে, ড. মূসা বিন শমশেরই যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভাগ্য প্রবর্তক ও কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণকারী বিস্ময়কর এক স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল পথ প্রদর্শক ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জনক।

মহান ব্যক্তিত্বের সব মাপকাঠিতে তিনি এখন বাংলাদেশের সর্বজন বরেণ্য এক বিরল বঙ্গ-সন্তান। যুক্তিসংগত কারনেই আন্তর্জাতিক সুধী মহলে আজ রব উঠেছে তিনি কি স্বীয় জাতির পক্ষ থেকে নগ্ন শিরে অভিবাদন পেতে পারেন না? তিনি কি প্রাপ্য স্বীকৃতির অভাবে এক অতি নগণ্য সাধারণ মানুষরূপে চির বিদায় নেবেন? তবে কি বিশ্বময় ছড়ানো তাঁর ভক্তকূল করুণ কন্ঠে একদিন বলে উঠবে, “হায়! বাংলাদেশের মুকুটহীন সম্রাট মহা অনাদরে, রাষ্ট্রীয় শোক বিহীন হয়ে এবং শোক সন্তপ্তদের মাতম বিহীন অবস্থায় চির বিদায় নিবেন?” তবে তাঁর বিশ্বময় বিশাল অনুরক্তগোষ্ঠী হয়তো আত্ম-সান্তনায় শোকার্ত কন্ঠে তাঁর হয়ে ধ্বনি তুলবেঃ “Veni, Vidi, Vici : তিনি এলেন, জয় করলেন, আর অভিমানে চলে গেলেন!

লেখক একজন প্রবীন সাংবাদিক ও সাবেক সম্পাদক

Get in Touch
13872941_1184930751548161_3951489368994433798_n.jpg

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার ভূমিকা

MAY 14 2017

বন্ধুরা, মনে রেখো জীবন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। সবার জন্যই ‘তা’ প্রতিনিয়ত দেয় নতুন নতুন চমৎকার শিক্ষা ও যোগায় প্রকৃত মানুষ হওয়ার উচ্চাভিলাষী প্রেরণা। আর এই দীর্ঘ জীবনে থাকে নানান পুঞ্জিভূত ঘটনা ও গল্প আর এই প্রতিটা গল্পের পিছনে থাকে একটি ইতিহাস আর কখনও কখনও সেই ইতিহাস হয় মহিমান্বিত। তাই সন্দেহাতিত ভাবে প্রমাণিত কিছু সত্য তথ্য নতুন প্রজন্ম ও সমগ্র বাংলার জনগনকে দেওয়া একান্তই প্রয়োজন। যাতে দূরিভূত হবে সব জঘন্য ও বিভৎস মিথ্যাবাদিতা আর প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বজন বিদিত অনন্ত সত্য।

আমার জন্ম ফরিদপুরে ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর। বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৫৪ সালে। তবে পরিচয়ের শুরুতেই কিছু তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় আমাদের পরিচয়ের পালা। বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখেই আমার স্বর্গীয় পিতাকে বলেছিলেন আমি একটি চৎড়ফরমু বা বিস্ময়কর বালক। যদিও ৩ বছর বয়স থেকেই আমাকে এই পরিচয়ে সবাই চিনতো। সেই ছোট বেলা থেকেই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য রয়েছে আমার অশেষ ত্যাগ। সেই বয়স থেকেই আমি জনগণের জন্য লড়েছি এবং সংগ্রাম করেছি এবং আদায় করেছি আমার দাবী। ১৯৫৮ সাল থেকে বাদ যায়নি কোন শাসক, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খাঁন, গভর্ণর আজম খাঁন ও গভর্ণর মোনায়েম খাঁনকেও আমি ছাড়িনি। বিস্তারিত আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনি ভিত্তিক কিছু বই বা ম্যাগাজিন অথবা ওয়েব সাইট থেকে বিশেষ করে ভারতের বিখ্যাত লেখক শ্রী-প্রবীর নিয়োগীর লেখা “প্রিন্স মূসা-রহস্যের এক অমর জীবন” প্রবন্ধ থেকে। সেটা পড়লে আপনারা সহজে বুঝতে পারবেন কি ভাবে আমি গভর্ণর মোনায়েম খাঁনকে তারই লাট ভবনে রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় জমজমাট সন্ধায়, বাংলার সমস্ত ছাত্র সমাজ ও অবিভাবকদের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক অপমান জনক ও কুরুচীপূর্ণ মন্তব্যের বিরুদ্ধে আমি কি ভাবে সেই গভর্ণর বাহাদুরকে সমস্ত মেহমানদের সামনে সমগ্র বাঙ্গালী জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিলাম। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমি সমগ্র পাকিস্তানের জুনিয়ার গ্রুপের ইংরেজী বিতার্কিক হিসাবে পুরস্কার প্রাপ্ত সর্ব কনিষ্ঠ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে ঐ ভোজ সভায় উপস্থিত ছিলাম। আমি সামনের কাতার থেকে লাফিয়ে উঠে ভয়ঙ্কর গর্জন করে তীব্র প্রতিবাদ করে, গোটা লাট ভবনকে প্রকম্পিত করে, দরবার হলকে তছনছ করে ভয়ংকর এক অবস্থার সৃষ্টির মধ্যে দিয়া কিভাবে আমি সেই লাট ভবন থেকে সর্ব প্রথম বাংলা ও বাঙ্গালীর স্বাধীকারের বীজ চিরকালের জন্য বপন করে ছিলাম। আপনারা আরো পাবেন ৬০এর দশকের আমার অপ্রতিরোদ্ধ আপোষহীন বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হয়েছিল ফরিদপুরের আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি ও বেগবান করেছিল স্বাধিকার আন্দোলনের ধারা এবং ফরিদপুর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাটি হিসাবে। ছাত্রলীগের ফরিদপুরের দূর্দান্ত প্রতাপশালী ছাত্রনেতা ও বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন হিসাবে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত না জানা অনেক কথা ও ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।


বন্ধুরা, একই সঙ্গে আমি আপনাদেরকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কালীন আমার ভূমিকা নিয়ে অতীতে অনেক জায়গায় মুদ্রিত বর্ণমালায় প্রকাশিত হয়েছে সেটাও আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন কে বা কাহারা আমার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে আমার ভূমিকা নিয়ে নানান মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কুৎসা রটাচ্ছে। আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাহলে এই সব নিন্দুকেরা ক্ষমা পেত না। কারণ এই সমস্ত অপরাধ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নীতিতে অমার্জনীয়।

বন্ধুরা, নিন্মে আপনাদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো....

৭১ এ প্রিন্স মূসা বিন শমশের এর ভূমিকা প্রসঙ্গে

“৭১ সালের ২৫ মার্চ সমস্ত দিন এবং রাতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বঙ্গবন্ধুর বাসায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে অবস্থান করছিলাম। সেখানে দেশের সকল জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনার জন্য। কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতাঁর সামনেই বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন ‘রাত হয়েছে তোঁরা যার যার জেলায় চলে যা।’ বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন তোঁর কাছে টাকা আছে নাকি, বলেই পকেটে হাত দিলেন। আমি বললাম মুজিব ভাই টাকা আছে লাগবে না। তৎক্ষনাত তিনি বললেন চাচাজানকে আমার সালাম বলবি, দোয়া করতে বলবি আর বলবি যে উনার পরামর্শের বাইরে যাব না। উল্লেখ্য চাচাজান হলেন আমার স্বর্গীয় পিতা যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বী, আধ্যাত্মিক গুরুর চেয়েও বড় (মুজিব ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় আমি তখন বালক ১৯৫৪ সালে আমার নিজ বাড়িতে তিনি প্রথম মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে ফরিদপুরে গিয়েছিলেন শুধু আমার স্বর্গীয় পিতাকে সালাম করতে। ঠিক তখন থেকেই প্রথম সাক্ষাতেই অন্যান্য উপস্থিত মেহমানদের সামনেই মুজিব ভাই আমাকে চৎড়ফরমু হিসাবে আবিস্কার করেন)। এর পরই তিনি দ্রুত ঢাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন আমাকে সহ সকল নেতৃবৃন্দকে আর আমাকে বললেন রাজ্জাক (মরহুম আব্দুর রাজ্জাক) তোদের সব ভবিষ্যৎ কর্মসূচি জানিয়ে দেব। হঠাৎই পিছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে আমাকে একটু দূরে নিয়ে গেলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় তাজউদ্দিন আহমেদ। তাজউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় সম্ভবত ১৯৬২ সালে। যিনি আমাকে সবসময় চৎড়ফরমু বলেই ডাকতেন, তিনি কোন ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি আমাকে বললেন মূসা মুজিব ভাই আমার কোনো কথাই শুনছেন না। জানি উনি তোমার ও আল্লামার (সিলেটের মোস্তফা আল্লামা) কথা কিছুটা শুনেন। তাই তুমি উনাকে একটু বুঝিয়ে বল, তুমিতো সবই জান অনিবার্য পরিণতির কথা। উনার চোখে মুখে ছিল ভংয়কর হতাশার ছাপ। আমি জানি উনি আমাকে দিয়ে কী বলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমি আমার প্রিয় তাজউদ্দিন ভাইয়ের ন্যায্য দাবির কথা মুজিব ভাইকে বলতে পারিনি। সেই বেদনা আজও আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। হয়ত এই বেদনা বইতে হবে অনন্তকাল। আমরা দ্রুত ৩২ নম্বর রোড ত্যাগ করে ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে চিটাগাং রেষ্টুরেন্টে কোনো রকম রাতের খাবার খেয়ে সোজা সদর ঘাট চলে যাই। নদী পার হওয়ার আগেই মাঝ নদীতে থাকা অবস্থায় বিকট শব্দ শুনতে পাই। বুঝতে পারি এই গর্জে উঠল পাক-হানাদারদের কামানের তা-ব লীলা। তখনই বুঝতে পারছিলাম মুজিব ভাইয়ের ঢাকা ত্যাগের নির্দেশনা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল।

অনেক কষ্টে পায়ে হেঁটে তিনদিন পর আমরা ফরিদপুরে পৌঁছলাম। বহু চেষ্টা করেও রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে আর যোগযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে হঠাৎ আমি টাইফয়েড-এ আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ফরিদপুরের প্রতিষ্ঠিত একজন ছাত্রনেতা হিসেবে আমি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করি এবং সমসাময়িক প্রায় প্রতিটি ছাত্র তথা গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করি। গগণচুম্বি জনপ্রিয়তা, নেতৃত্বে আপসহীনতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও লৌহ কঠিন ব্যক্তিত্বের সুবাদে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে প্রিয় ও বিশ্বস্ত ছাত্রনেতা হিসেবে ঘনিষ্ঠতা ও আশিস লাভ করি।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল ১৯৭১ সালের ২১ শে এপ্রিল গোয়ালন্দ হয়ে ফরিদপুর শহর দখল করে অবস্থান নেয়। পরদিন ২২ শে এপ্রিল আমি শহরের বাইরে একটি রাস্তা অতিক্রম করার সময় পাকিস্তানী সেনারা আমাকে আটক করে এবং কোনো প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ না করেই আমাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় খোলা জিপে বহন করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় তাদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে আটক করে রাখে। ছাত্রলীগের দুর্দান্ত প্রতাপশালী নেতা হিসাবে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে সামরিক বাহিনীর কয়েদখানায় (জল্লাদখানা) বন্দী করে এবং উক্ত কয়েদখানায় দীর্ঘ ৮ মাস আটক করে রাখে। এই সময় আমাকে প্রচ-ভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। ক্ষত বিক্ষত শরীরে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় আমি ১৯৭১ এর ডিসেম্বরের ৯ তারিখে সামরিক কয়েদখানা থেকে মুক্তি লাভ করি এবং তৎক্ষণাৎ ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করি কিন্তু প্রথম সাক্ষাতে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন এখন কী করবি? আমি উনাকে জানালাম ব্যবসা শুরু করে দিয়েছি। আমি ১৯৭২ সালেই দেশে ব্যবসা শুরু করি। শুরু থেকেই আমার ব্যবসায় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মতো উত্থান ঘটে এবং ১৯৭৩ সালেই দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে আমার ব্যবসায় প্রসার লাভ করে। তাজউদ্দিন ভাই তখন অর্থমন্ত্রী। তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। তাঁকে আমি আমার দেশ ও জাতির জন্য এক যাদুকরী পরিকল্পনার কথা শেয়ার করতাম। একদিন তিনি নিজেই আমাকে বিদেশে ফোন করে পরামর্শ দিলেন। বললেন যে- মূসা কিছু ডকুমেন্ট্রি এভিডেন্স নিয়ে দ্রুত তুমি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ কর, সময় নষ্ট করো না। ঠিক তখনই বিদেশ থেকে বুঝতে পারলাম আমার স্বপ্নের পরিকল্পনাই হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার একমাত্র পাথেয়। স্বভাবত স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর বছরগুলো কঠিন সব সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত – ভুখা-নাঙ্গা গণমানুষের সীমাহীন দুঃখ কষ্ট লাঘবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সরকারকে সাহায্য করতে তীব্র তাগিদ বোধ করি। ফলে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক জরুরি সাক্ষাতে মিলিত হই এবং উনাকে আমার স্বপ্নের গবমধ চৎড়লবপঃ অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করি এবং ফিলিপিন্স, ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের জনশক্তি রপ্তানির নীতিমালা ও তাঁদের রেমিটেন্সের স্বর্ণ দুয়ার খুলে যাওয়ায় দ্রুত সেই সব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলে যাওয়ার কথা বলি। তাজউদ্দিন ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী সেই উন্নয়ন ঘটার প্রমাণের দলিলাদি উপস্থাপন করি। সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আমার বক্তব্য শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, মনে হলো তিনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। তিনি আমার ওপরে বিশ্বাস করে ঐ মুহূর্ত থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, “মূসা আমাদের রপ্তানির তো কিছুই নেই, পাট ছিল তাও শেষ।” নিজস্ব আশাবাদ ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত জনশক্তি রপ্তানিই হতে পারে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ দুর্যোগ অবসানের রক্ষাকবচ। আমি নিশ্চিত, তুই হবি একমাত্র আমাদের কাক্সিক্ষত নতুন সোনার বাংলা গড়ার শ্রেষ্ঠ রূপকার ও জনশক্তি রপ্তানির প্রবাদ পুরুষ।

বন্ধুরা, যেহেতু আমি ১৯৭১ সালে ২২ শে এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম এবং ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনীর টর্চার সেলে বন্দী ছিলাম। বন্দী অবস্থায় তাদের পৈচাশিক, নজিরবিহীন বর্বরোচিত নৃশংসতা ও জঘন্যতম নির্যাতনের শিকার হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় ৯ই ডিসেম্বর মুক্তি পাই। তাই ঠিক তখন থেকেই উপলদ্ধি করতে পারি মুক্তিযুদ্ধে আমার সরাসরি ভূমিকা না থাকার বেদনার কথা।


দীর্ঘ প্রায় ৮ মাসের বন্দীদশা অবস্থায় সেই বিভৎস যন্ত্রণা ও ভয়ঙ্কর তিক্ত অভিজ্ঞতাই আমাকে সমগ্র জাতির কাছে দায়বদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করেছে। কারণ ইহা সর্বজনবিদিত স্বীকৃত সত্য যে, স্বাধীনতার পরবর্তী বছরগুলো আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ ছিল একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত, ভয়ঙ্কর দুর্দশাগ্রস্ত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত সম্প্রদায়, দেশ ও জাতি। কিভাবে সমস্ত প্রতিকূল অবস্থাকে পরাজিত করে আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এবং তার সহায়তায় একক ভাবে শ্রেষ্ঠ রূপকার হিসাবে জনশক্তি রপ্তানীর খাত সৃষ্টি করে সফলভাবে অর্জন করেছি এদেশ ও জাতির জন্য অফুরন্ত সম্পদের ভাণ্ডার। সেটা হলো প্রবাসী আয়ের প্রবাহ (রেমিটেন্স)। আর এই সম্পদ ভোগ করবে এই জাতি অনন্তকাল। দেশ ও জাতির জন্য আমি যে অভূতপূর্ব ও অবিশ্বাস্য অবদান রেখেছি। সেই দায়বদ্ধতাকে মূলমন্ত্র ভেবেই চেষ্টিত হয়েছি আজকের নতুন বাংলাদেশ গড়তে এবং আগামী প্রজন্মকে সোনার বাংলাদেশ উপহার দিয়ে বিশ্ব দরবারে এই দেশকে প্রতিষ্ঠিত করে সমগ্র বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।


সুধী পাঠকদের বলা প্রয়োজন যে, আজকের নতুন বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে কেবল মাত্র রেমিটেন্সের ওপর ভর করে। তাই সুপ্রিয় পাঠকদের সুবিধার্থে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত যে সংবাদটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সেই প্রবন্ধটিও পড়ুন।


দেশ ও সমগ্র জাতির মঙ্গল কামনায়,

ড. মূসা বিন শমশের

Get in Touch
17342699_1456756534365580_7058913013161558683_n.jpg

গতকাল ৭ই মে, ২০১৭ইং তারিখে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ড. মূসা বিন শমশেরের বক্তব্য আপনাদের জন্য তুলে ধরা হল

MAY 8, 2017

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আমি দীর্ঘ ০৯ মাস যাবত নানান শারিরীক ও মানসিক রোগে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত ও আমার বাকশক্তিও অনেকটা লোপ পেয়েছে। কিন্তু কেন আমি আজ এই প্লাটফরমে দাড়িয়ে..? আমি কি এমন অপরাধ করেছি?। কেনই বা আমাকে জাতির সামনে বার বার এই ভাবে হয়রানি, অপমান, অপদস্থ করা হচ্ছে। আমার দ্বারা দেশের, সরকারের, কোন ধর্মের, কোন প্রতিষ্ঠানের বা কোন সম্প্রদায়ের কোন ক্ষতি হয়নি। এমনকি আমি কোন ব্যাংক এর ঋণক্ষেলাপীও নই। বরঞ্চ আমার একাউন্টে শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা এনে সমৃদ্ধ করেছি ব্যাংক সেক্টরকে। আমি কারো প্রতিপক্ষ, প্রতিদন্দী বা রাজনীতিবিদও নই। ইহা সর্বজনবিদিত স্বীকৃত সত্য যে, স্বাধীনতার পরবর্তী বছরগুলো আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ ছিল একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত, ভয়ঙ্কর দুর্দশাগ্রস্ত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত সম্প্রদায়, দেশ ও জাতি। কিভাবে সমস্ত প্রতিকূল অবস্থাকে পরাজিত করে আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এবং তার সহায়তায় একক ভাবে শ্রেষ্ঠ রূপকার হিসাবে জনশক্তি রপ্তানির খাত সৃষ্টি করে সফলভাবে অর্জন করেছি এদেশ ও জাতির জন্য অফুরন্ত সম্পদের ভা-ার। সেটা হলো প্রবাসী আয়ের প্রবাহ (রেমিটেন্স)। আর এই সম্পদ ভোগ করবে এই জাতি অনন্তকাল। আর এই ভাবে আমি খুলে দিয়েছি অর্থনৈতিক মুক্তির দুয়ার আর সৃষ্টি করেছি স্থিতিশীল নতুন এক বংলাদেশ। দেশ ও জাতির জন্য আমি যে অভূতপূর্ব ও অবিশ্বাস্য অবদান রেখেছি সেটা আপনাদের মাধ্যমে সমস্ত জাতির কাছে তুলে ধরছি। যদিও কমবেশী সকলেরই জানা।


প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, কোন দেশের সরকারের একার পক্ষে লক্ষ লক্ষ সমস্যা সমাধান করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই আপনাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জনগনকে সচেতন করে জাতীয় সমস্যা গুলো সমাধনের জন্য সরকারের পাশে দাড়াতে হবে। আজ যে সমস্ত সমস্যা আমি তুলে ধরছি এগুলো আমি অতীতেও বলেছি এবং ভারতীয় মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্নপাত করছে না....


রাষ্ট্রের সমস্যা কোনটি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ঃ জঙ্গী না নজিরবিহীন কলঙ্কিত, বীভৎস ও দূর্নীতিগ্রস্ত নিকৃষ্ট বর্তমান...?


১) দেশের বর্তমান নানা মারাত্মক সমস্যার মধ্যে জঙ্গী হলো একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। যদিও অনেক সমস্যার মত এটাও সাময়িক সমস্যা। তবে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর আরো কয়েকটি সমস্যা যা হতে পারে স্থায়ী বা চিরস্থায়ী। বিগত দুই যুগ ধরে এদেশে একটি কলঙ্কিত ও বিষাক্ত অধ্যায় সংক্রামিত করেছে দেশ ও জাতির উন্নয়নের ধারা। ভয়ঙ্কর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জিম্মি করেছে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার সমস্ত অগ্রযাত্রা। সেটা হলো আমাদের দেশের প্রকৃত মেধাবী সোনার সন্তানেরা আজ সরকারী চাকুরীর সব রকম সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজ সবচেয়ে সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে মেধা শুন্য, অযোগ্য ও অপদার্থরা প্রচুর অর্থের বিনিময়ে সেই মেধাবী সোনার সন্তানদের শুন্যস্থান পুরণ করছে। ফলে, উভয় ক্ষেত্রে দেশের ভয়াবহ দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছে হাজার হাজার ভূক্তভোগী পরিবার বছরের পর বছর। এখন সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে একমাত্র যোগ্যতা হলো অবৈধ অর্থ। সেখানে কমপক্ষে ১০-২০ লক্ষ টাকা ছাড়া সরকারী কোন চাকুরী মেলা দুঃসপ্ন। দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে এতো জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই সকল দূর্নীতিবাজরা যারা সরকারী চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ আদান প্রদান করে তারা আমাদের দেশ ও জাতির অস্তিত্বের জন্য বিশাল হুমকি। কারণ এই দুষ্কৃতিকারীদের সৃষ্ট কলঙ্কিত অধ্যায় একদিন এই জাতিকে ভয়ঙ্কর অবস্থায় ফেলে দেবে। এই দুষ্কৃতিকারীদের বিচার কে করবে? কি ভাবে তাদের বিচার হবে.? ইহা দেশ ও জাতির জন্য ভয়ঙ্কর ও কলঙ্কিত সমস্যা। এই সমস্যা চিরস্থায়ী হওয়ার আগেই অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

২) আরও একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা হচ্ছে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা, অধিকাংশ ব্যবসায়ি বৈধ ও অবৈধ ভাবে দেশে ব্যবসা করে দেশের সমস্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে কোটি কোটি টাকা অর্জন করে আর তারা অবৈধভাবে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে কানাডা, সিংঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাড়ি গাড়ি কিনে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। ইহা ওপেনসিক্রেট, প্রতিটা নাগরিক দেশ থেকে বছরে মাত্র ইউএসডি ৫০০০ (পাঁচ হাজার ডলার) বৈধভাবে নিতে পারে। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলা, তথাকথিত রাজনীতিবিদরাও অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারী ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদেশে গড়ে তুলছে টাকার পাহাড়। কিন্তু কোথায় পায় তারা লক্ষ লক্ষ ডলার। কোথায় পেল তারা বিদেশে বাড়ী, গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স করার অবৈধ কোটি কোটি টাকা.?। তাদের বাপ দাদার জমিদারী ছিল সেই সব দেশে.? না কি দেশের সম্পদ লুটে নিয়ে বিদেশে গড়ে তুলেছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ইহা সর্বজন বিদিত সত্য যে, মুদ্রা পাচারকারীরা দেশ ও জাতির ভয়ঙ্কর শত্রু। অনেক উন্নত দেশে পাচারকারীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।



আরব দেশে হাজার বাংলাদেশি গৃহকর্মী যৌন নির্যাতনের শিকার কে শুনবে তাদের গগণ বিদারী আহাজারি... কে দেবে তাদের পরিত্রাণ

৩) বেশ কয়েক বছর ধরে অদৃশ্য শক্তির সেচ্ছাচারিতা ও কুটনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান ও জাতীয় অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার জনশক্তি রপ্তানি খাত আজ স্থবির ও হুমকির মুখে। শুধু তাই না যে সমস্ত দেশে নিজেদের ঘরে তাদের মা বোনের নিরাপত্তার সাংঘাতিক অভাব রয়েছে। ঠিক সেই সমস্ত দেশে আমাদের দেশের অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির মুসলিম নারীদের হাউজ মেইড হিসাবে পাঠানো শুধু জাতীয় মর্যাদা হানি নয় বরঞ্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুশ্রীত কালজয়ী নীতিতে অমার্জনীয় অপরাধ।

৪) আর একটি মারাত্বক সমস্যা স্বাস্থ্যখ্যাত। জাতীয় স্বাস্থ্যখাত আজ ব্যক্তি মালিকানাধীন হেল্থ কেয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলির কাছে জিম্মি। চরম দুর্নীতিতে ভরে গেছে এই সেক্টর। সাধারন জনগন সরকারী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর অপ্রতিরোদ্ধ জুলুম, অত্যাচার ও ঢালাও দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে আছে এদেশের নীরিহ জনগোষ্ঠী। এদিকে আর একটি অপরাধ প্রতিনিয়তই সংঘটিত হচ্ছে। এটা এখন ওপেনসিক্রেট যে, তথাকথিত ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অযথা সামান্য সর্দি কাশি হলেও সোজা চলে যায় সিংঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে পাচার হয় চিকিৎসার নামে। নিঃসন্দেহে এটা দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক একটি সমস্যা। এর চিরস্থায়ী একটি সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

৫) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর গুলোতে যানজট এখন একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা এই সৃষ্ঠ যানজটের কারনে বিঘœ ঘটছে এমনকি জনগণের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা দারুণভাবে ব্যহত হচ্ছে। অপ্রতিরোদ্ধভাবে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের অলি-গলিতে রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্ক করে দুর্বিসহ করে তুলেছে জন-জীবন। কোথা থেকে আসে এত গাড়ি? অবশ্যই এটা সমাধান যোগ্য এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে সমস্ত যানজট নিরসন করে ঢাকার রাস্তা পরিষ্কার করা সম্ভব। অভিজ্ঞ মহলের মতে ঢাকা শহরের ৬৫% গাড়ি অবৈধ। এসব গাড়ির মালিকদের বৈধ ও দৃশ্যমান কোন উপার্জন নেই। এটা একটি সর্বনাশা প্রকট সমস্যা। সমস্যাটি সমাধান অত্যন্ত জরুরী।

৬) প্রতিনিয়ত কম বেশী এমন অনেক সর্বনাশা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যা আপনাদের সকলেরই জানা। ধরুন না, মোবাইল টেলিফোনের কথা এই মোবাইল টেলিফোন কোম্পানীগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে এই দেশের অর্থনীতি। আর আমরা নপুংষকদের মত নীরবে সব সহ্য করে যাচ্ছি। অস্বীকার করতে পারবেন, আমাদের সরকারী ল্যান্ড টেলিফোনগুলো সর্বনাশা গ্রাসের শিকার। সরকারকে কত ট্যাক্স দিচ্ছে জানি না। যতদূর জানি সেটা ভয়ংকর সর্বনাশ। সেটা হলো প্রতিটা মোবাইল কোম্পানী প্রতিদিন বিনা কারণে প্রতিটি পত্রিকা ও প্রতিটা স্যাটেলাইট টেলিভিশনে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু কেন এবং কার স্বার্থে? তারা নিশ্চই ভিওআইপি ও বিদেশী লুটেরার দল। এগুলো বন্ধ করে প্রতিটি মোবাইল কোম্পানীকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ টেলিফোন বোর্ডের অধীনে চালানোর ব্যবস্থা করা। জরুরী নতুবা ধ্বংস অনিবার্য। আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেচে থাকতেন এত স্পর্ধা ও প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতো না।

৭) বন্ধুরা আমি বিশ্বাস করি কোন দেশের উন্নয়ণের নামে গণতন্ত্র বিসর্জন দেওয়া যাবে না। গণমুখী প্রশাসন সৃষ্টি করে সেখানে অদক্ষতা ও দূর্নীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। টাকা পাচারকারীরা দেশ ও জাতির সবচেয়ে জঘন্যতম শত্রু। অবশ্যই এই অর্থ পাচারকারীদের শাস্তি উন্নত দেশের মত মৃত্যু দন্ডের বিধান রাখতে হবে। সেই অর্থ ফিরিয়ে আনলে দেশে আর অভাব থাকবে না। সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে। তবেই সুখী ও উন্নত সম্পদশালী দেশ গড়ে উঠবে।

৮) যে কোন দেশে নির্বাসিত গণতন্ত্রের সংক্রামিত উত্তাপে দগ্ধ হয় সংসদীয় গণতন্ত্র আর কলঙ্কিত হয় পবিত্র সংসদ এবং কেবিনেট সিস্টেম। প্রতারিত হয় জনগণ ও ভূলুন্ঠিত হয় তাদের স্বাধীকার। তখন প্রশ্ন আসে পবিত্র সংবিধান, সার্বভৌমত্ত ও দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তখনই যুব সমাজ জাতির চালিকা শক্তি হয়ে সমস্ত অপশক্তিকে পরাজিত করার লক্ষে অবতীর্ণ হয় বিজয় অর্জন করার সেই লড়াইয়ে। আমি বিশ্বাস করি যে, তাদের এই লড়াইয়ে বিজয় অবধারিত। কারণ অপ্রতিরোদ্ধ ধর্মীয় গোড়ামির ঢালাও চর্চা, রাজনৈতিক বৈষম্য ও সমাজপতিদের অবিরত নিরর্থক অসামাজিক, অশ্লীল ও অশ্রাব্য বক্তব্যের অসম প্রতিযোগীতায় দিশেহারা ও বিভ্রান্তে বিশাল ঐ জনগোষ্ঠি হয়ে পড়ে ক্লান্ত।


বিশ্বের শত শত কোটি বক্তদের উদ্দ্যেশে আমার চিরন্তন বাণী হলোঃ মনে রেখো তোমার মেধাই তোমার প্রভূ। সুতরাং তোমার মেধা দিয়ে বিচার কর এবং সমাধান বের কর এইসব ভয়ংকর সমস্যায় জর্জরিত তোমাদের দেশ ও তোমাদের জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।


ড. মূসা বিন শমশের।



DATCO

Holding Company

Address: House # 57, Road # 1, Block # I, Banani, Dhaka-1213, BANGLADESH

Tel: +8802 988 3932, +8802 989 3393, +8802 988 3394, +8802 898 3935,

+8802 988 3936, +8802 899 5609, +8802 989 5278, +8802 978 3023

Fax: +8802 882 3524

Email: datcoglobal@yahoo.com

dattcoglobal2009@gmail.com

Web: www.datco-bd.com

Get in Touch

Contact me now and see what I can do for you or your business.

bottom of page